স্বাধীনতা উত্তর বাংলদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে দেশের প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। তার পূর্বে এ দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে আসছিল। আর এর ফলে শুরু হয় সদ্যস্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার এক নতুন যুগ। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে দেশে পরবর্তীতে সৃষ্টি হওয়া প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড এবং প্রাথমিক শিক্ষা সকল শিক্ষার ভিত্তি। সেই উপলব্ধি থেকে সরকার প্রাথমিক শিক্ষা খাতে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব আরোপ করে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-৩ (পিইডিপি-৩)-এর মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে দেশের সকল শিশুকে বিনামূল্যে সম্পূর্ণ নতুন বই শিক্ষা বছরের প্রথম দিনই সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি করে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি চালু করা হয়েছে। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি উপযোগী শতভাগ শিশুর ভর্তি নিশ্চিত করাসহ ঝরেপড়ার হার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থী বৃদ্ধির ফলে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেনতুন ভবন নির্মাণ এবং সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণি থেকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীতসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাচক্র শেষে দেশের সকল ৫ম শ্রেণির শিশু একসাথে এবং এক প্রশ্নে জাতীয় পরীক্ষার ন্যায় সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রচলন করা হয়েছে; এতে প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুদের বৃত্তি প্রদান করা হয় এবং শিশুদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের শরীর গঠনসহ খেলাধুলায় আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রতিবছর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য পিটিআইগুলোতে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং পিটিআইবিহীন ১২টি জেলাতে নতুন করে পিটিআই চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীতকরণের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। শিক্ষা জীবনের প্রথম থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ এবং মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সরবরাহ করা হচ্ছে। আশা করা যায় এর ফলে আমাদের শিশুরা আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় মাঠপর্যায়ে ৭বিভাগে উপ-পরিচলক অফিস, ৬৪ জেলায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, শিক্ষকদের দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণের জন্য ৬৭ টি পিটিআই (প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট), ৫০৫ টি উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিস এবং শিক্ষকদের স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণের জন্য ৪৮২ টি উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টার রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সহজে সম্পাদন করার লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে ক্ষমাতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস